ইয়াকুটস্ক
পৃথিবীর বড় দেশ গুলোর মধ্যে রাশিয়া অন্যতম, রাশিয়ায় কিছু এলাকা এমন আছে যার নাম শুনলে ঠান্ডায় শরীর কেপে উঠে। রক্ত জমাট করা ঠান্ডার সাথে সাথে নিজের মধ্যে রহস্য লুকিয়ে রেখেছে সাইবেরিয়া প্রদেশের একটি নগরী ইয়াকুটিয়া ।
রাশিয়ার উত্তরে অবস্থিত প্রায় ১৩ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সাইবেরিয়ার অবস্থান , যা রাশিয়ার প্রায় ৭৭ ভাগ জায়গা জুড়ে অবস্থিত । কম জনসংখ্যার গড় হিসাবে এর স্থান পৃথিবীতে প্রথম । প্রদেশটির বেশির ভাগ এলাকা পৃথিবীর সবচেয়ে ঠান্ডা জায়গা হিসাবে পরিচিত । তার মধ্যে ইয়াকুটিয়া অন্যতম একটি নগরী । শীতকালে কয়েক মাস এর তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রী এর নিচে থাকে, যা একটি ডিপ ফ্রিজের দিগুন । মারাত্মক শীতের বহিঃপ্রকাশ শহরটিতে অক্টোবর মাস থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করে । আর ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে এটি হয়ে উঠে পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল শহর . কিন্তু থেমে নেই এখানকার জনজীবন । বরফ পরিবেশের জন্য নির্মিত বাড়িগুলো দেখতে একটু ভিন্ন রকম এই নগরীর । তাপমাত্রা মাইনাস 55 ডিগ্রির নিচে চলে গেলে এখানকার স্কুল গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় । খুব কম জনসংখ্যা হওয়ার বিশেষ একটি কারণ হলো কনকনে ঠান্ডা । কিন্তু কম জনসংখ্যা হওয়া সত্যেও এখানকার জীবনযাত্রা অনেক আধুনিক । শহরটিতে রয়েছে এয়ারপোর্ট, বিশ্ব বিদ্যালয়, রেস্তোঁরা এবং একটি সার্বজনীন পরিবহন ব্যবস্থা । ইয়াকুটিয়ায় অবস্থিত বিমানবন্দরে প্লেন ল্যান্ডিং বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে পাইলটদের কাছে । রাশিয়ার কয়েকটি বড় শহর থেকে নিয়মিত ফ্লাইট এখানে যাতায়াত করে থাকে । শীতকালে এখানে প্রায়ই কুয়াশা থাকে, কখনও কখনও কয়েক দিন বা সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয় কুয়াশা । ফলস্বরূপ বিমানবন্দরটি বন্ধ হয়ে যায় , বা ফ্লাইটগুলি কয়েক ঘন্টা বিলম্বিত করে থাকে । ২০০২ সালের আদম শুমারি হিসাবে এর জনসংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ ১০ হাজার। এটি একটি প্রাচীন শহর হলেও ১৮৮০ থেকে ১৮৯০ সালে শহরটি পৃথিবীতে একটি দামি নগরী হিসেবে পরিচিত হয়ে যায় নগরীটির স্বর্ণ আর খণিজ পদার্থের কারণে। এন্টার্কটিকার পর এটি পৃথিবীর সবচেয়ে শীতলতম স্থান। এর সর্ব নিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ৭১ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়। শহরটির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে লেনা নদী। বছরের অর্ধেক সময় এই নদী বরফে জমে থাকে । ইয়াকুটিয়া এই নদীর পাশে অবস্থিত প্রধান বন্দর। বছরের প্রায় অর্ধেক সময় লেনা নদীটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জলপথ দাঁড়ায় ইয়াকুটিয়ার জন্য। এটি বৈকাল হ্রদের পশ্চিমাংশে উৎপত্তি লাভ করে প্রথমে উত্তর-পূর্বে এবং পরবর্তীকালে উত্তর দিকে ৪,৪০০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে উত্তর মহাসাগরের সাগরে পতিত হয়েছে। এটি প্রায় ৩৩৮০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য । নদীর উপর কোনও বাঁধ, আগাছা বা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নেই . এখানে গ্রীষ্ম কাল খুবি সংক্ষিপ্ত। এর শুরুটি ইতিবাচক দিনের তাপমাত্রা প্রতিষ্ঠার দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এটি এপ্রিলের দ্বিতীয়ার্ধে ঘটে, কেবল মে মাসের শেষে বা জুনের মাঝামাঝি সময়ে আসে যখন বরফ গলে যায় এবং দিনের তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায় । গ্রীষ্মতে তুলনামূলকভাবে গরম পড়ে, আর খরা দেখা দিলে লেন নদীটির পানি অনেক নিচে নেমে যায় ।
নগরীটির মাছের বাজারে গেলে আপনি অবাক হবেন । জমে আছে সব মাছ কোনো ফ্রিজ ছাড়াই । জেলেরা বরফের মধ্যে গর্ত করে জাল ফেলে এইসব মাছ ধরে থাকে । বরফের ভিতরে যে পানি থাকে তার তাপমাত্রা মাইনাস ০ ডিগ্রি, কিন্তু বাইরে প্রায় ৫০ ডিগ্রি, তাই মাছ পানি থেকে তুললে সঙ্গে সঙ্গে জমে বরফ হয়ে যায় .
এখানকার মানুষ চশমা পরা থেকে বিরত থাকে যখন তারা ঘরের বাইরে যায়। ধাতু হওয়ার কারণে চশমাটি খুব তাড়াতাড়ি বরফে জমে যায় এবং চামড়ার সাথে আটকে যায় । পরবর্তীতে এটি খুলতে গেলে চামড়ার ভয়ানক ক্ষতি হয় বিশ্বের বৃহত্তম সোনার সঞ্চিত অঞ্চল সহ বন্যপ্রাণী এবং প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এই অঞ্চলটিকে ঘিরে রেখেছে। তাপমাত্রা ও উত্তরের বনের বিস্তৃত প্রসারিত এই অঞ্চলটি পৃথিবীর সবচেয়ে অবহেলিত অঞ্চল ও বটে।
#naturephotography #amazing
コメント